আজ ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

coke

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে কোকাকোলার ‘‌করপোরেট গ্রিনওয়াশ’


জাতিসংঘের এবারের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ ২৭) লক্ষ্য বৈশ্বিক তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা। মিসরের শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের স্পন্সর করেছে কোমল পানীয় প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা। এ তথ্য অনেককে অবাক করেছে, আবার কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক একটি সম্মেলনে কোকাকোলার মতো প্লাস্টিক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপ এরই মধ্যে ইন্টারনেটে সমালোচনার ঝড় তুলে দিয়েছে। পরিবেশবাদীরা শুরু থেকেই মিসরের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছেন। তারা একে বলছেন, ‘‌করপোরেট গ্রিনওয়াশ’।

বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণের জন্য অন্যতম দায়ী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানাতে এর মধ্যে পরিবেশকর্মীরা দুই লাখের বেশি মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। স্বাক্ষরের মাধ্যমে করপোরেট লবিংয়ের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু আলোচনা থেকে নিষিদ্ধেরও দাবি জানানো হচ্ছে।

অবশ্য কোকাকোলার দাবি, এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা পরিবেশ দূষণে নিজেদের দায় কমাতে চায়। এ ছাড়া সমুদ্রের প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা পরিষ্কার করার টেকসই উদ্যোগের বিষয়েও নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে কোমল পানীয়ের অন্যতম এ ব্র্যান্ড।

সব মিলিয়ে ইন্টারনেটজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বলা হচ্ছে, সমুদ্রে অন্যতম প্লাস্টিক দূষণকারীকে কপ-২৭ এ যুক্ত করা সম্মেলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেখানে পৃথিবীর বিপজ্জনক অতিরিক্ত উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য আলোচনা হয়, সেখানে কোকাকোলার স্পন্সরশিপকে সর্ষের মধ্যে ভূত বলছেন তারা।

অবশ্য আয়োজক মিসর বলছে, এ সম্মেলনে আগে দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। লন্ডনের বেইস বিজনেস স্কুলের সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ববি ব্যানার্জি বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে করপোরেট প্রতিষ্ঠান উপস্থিত হয়। কপ সম্মেলন বছর বছর বাণিজ্যমেলা হয়ে উঠছে। ইদানিং জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে বাণিজ্যিক প্রচারণা বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এর আগে মাইক্রোসফট, ভোডাফোন ইত্যাদি বড় বড় কোম্পানি কপ সম্মেলনে অংশ নিলেও কোকাকোলার তুলনায় তারা কম সমালোচিত হয়েছে।

অবশ্য সমালোচনা নিয়ে জাতিসংঘের কোনো মাথাব্যথা নেই। একে মিসর ও কোকাকোলার অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে করছে তারা। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু অরাজনৈতিক হলেই জাতিসংঘ খুশি। সম্মেলনে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈতিক যোগ্যতা আছে কিনা সে বিষয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। সাংবাদিকরা এ নিয়ে মিসরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে তাদের দেয়া ইমেইলের কোনো উত্তর আসেনি। এদিকে কপ থেকে কোকাকোলাকে বাদ দেয়ার পক্ষে আন্দোলনকারীরা সরব। তারা বলছেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর নেয়া জাতিসংঘের উচিত নয়। তাদের অংশগ্রহণে পুরো সম্মেলনই নিরর্থক হয়ে পড়ে।

আরো বলছেন, কোকাকোলা বিশ্বের বৃহত্তম প্লাস্টিক উৎপাদক ও শীর্ষ দূষণকারী। তারা প্লাস্টিক উৎপাদনের সময় বায়ু দূষণ করে। সেসব প্লাস্টিক বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে, যার বেশিরভাগই পুড়িয়ে ফেলা হয় বা সমুদ্রে ফেলা হয়। পোড়ানোর ফলে বাতাসে আরো কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করে বোতলগুলো। আর সমুদ্রে ফেলা প্লাস্টিক সাগরদূষণের জন্য দায়ী।

অবশ্য কোকাকোলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সমুদ্রে দূষণ কমানোর লক্ষ্য সমর্থন করে। ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণ এক-চতুর্থাংশ কমাতে চায়। আর ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কার্বন উৎপাদন নামাতে চায় শূন্যের কোঠায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর